বিএনপি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ক্ষমতায় থেকে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে; গড়েনি বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য।

আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত কমিটি গঠনের পর আজ রোববার দুপুরে গণভবনে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের কাজ হচ্ছে জনগণের ভাগ্য গড়া। আর সেটাই আমরা কিন্তু করে যাচ্ছি এবং সেটা আমাদের করতে হবে। মানুষের আস্থা, বিশ্বাস, এটাই আমাদের বড় শক্তি। আমাদের আর কোনো শক্তি নাই। একমাত্র জনগণের শক্তিতেই আমরা বিশ্বাস করি। আওয়ামী লীগই এ দেশের জনগণের জন্য কাজ করে এবং আওয়ামী লীগের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের মানুষের আজকে ভাগ্য ফিরে এসেছে।

সংগঠন বলতে বাংলাদেশে একমাত্র আওয়ামী লীগই আছে বলে মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সংগঠন বলতে সারা বাংলাদেশে সত্যি কথাটা বলা যায়, তবে আওয়ামী লীগই আছে, এটা ঠিক। আমরা তো মাটি মানুষ থেকে গড়ে ওঠা সংগঠন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর বিএনপি-জাতীয় পার্টি, এগুলো তো অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখলকারী একজন মিলিটারি শাসক তার পকেট থেকে বের হওয়া। এরা ভাসমান। কাজেই এদের দায়দায়িত্বটা জনগণের ওপর নেই। যদিও তারা দাবি করে অনেক বছর ক্ষমতায়, কিন্তু ক্ষমতায় থেকেই তারা নিজেদের ভাগ্য গড়েছে; বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়েনি।
স্বাধীনচেতা হলে বড় দেশগুলোর অনেকে পছন্দ করে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি খুব স্বাধীনচেতা হয়, তাহলে অনেকেই তাদের পছন্দ করে না।

অনেক বড় বড় দেশ, আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীরা কখনও এটা পছন্দ করবে না, কিন্তু আমাদের জনগণকে যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি, তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন, বাংলাদেশের মানুষের উন্নতি এটা কেউ আটকাতে পারবে না, যেটা জাতির পিতা বলে গিয়েছিলেন, কেউ দাবায় রাখতে পারবা না। সেটা পারবে না। কাজেই এটা আপনারা সবাই সব সময় মাথায় রেখেই সংগঠনটির ওপর বেশি গুরুত্ব দেবেন এবং সংগঠনকে শক্তিশালী করবেন, এটাই আমার অনুরোধ।

নতুন সদস্য সংগ্রহের ওপর জোর দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা কিন্তু বই ছাপিয়ে দিয়েছি সদস্য সংগ্রহ করার। এই কাজটা আমাদের প্রত্যেকটা জেলা-উপজেলা ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত সকাইতে সম্পন্ন করতে হবে এবং মুড়ি বইগুলো ফেরত দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা আবার নতুনভাবে টিম করে দেব। একটা বিভাগে বিভাগীয় যে টিম আমরা করে দেব, তাদের ওপর দায়িত্ব থাকবে প্রত্যেকটা জায়গায় সদস্য সংগ্রহ হলো কি না।

বিভিন্ন ইউনিটের সম্মেলনগুলো যথাসময়ে করার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনটা আপনারা যথাযথ সময় করবেনৃআমরা নতুনভাবে টিম করে দেব একটা বিভাগের জন্য। প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত যাদের সম্মেলনগুলো হয়, সেটা করা। অনেকগুলো এখনও বাদ রয়ে গেছে। একটাও যেন বাদ না থাকে।

নেতা-কর্মীদের কাছে দোয়া চেয়ে টানা দশবারের আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দোয়া করবেন। আপনারা নির্বাচিত করেছেন আবার। এই এতবার আমার মনে হয় একটা পার্টির দায়িত্বে থাকা ঠিক না।

তারপরেও এখন যেহেতু সারা বিশ্বব্যাপী একটা দুঃসময়…বিশ্বব্যাপী দুঃসময়ের জন্যই আমি হয়তো মানা করিনি, কিন্তু আমার বয়স হয়েছে। এটা মনে রাখতে হবে, কিন্তু সংগঠনটা যেন ঠিক থাকে চলতে থাকে, সেই ব্যবস্থাটা করতে হবে।

গণভবনে নেতা-কর্মীদের স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, যা-ই হোক আপনারা এসেছেন কষ্ট করে। আপনারা কষ্ট করে এসেছেন গণভবনে, এই ভবন আপনাদেরই ভবন। এটা নাম আব্বা দিয়েছেন গণভবন। কারণ এটা জনগণেরই ভবন।

গণভবনে টানা দশমবারের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান আওয়ামী লীগসহ এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। দলের সভাপতিকে শুভেচ্ছা জানাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতারাও গণভবনে উপস্থিত ছিলেন।

গণভবনে শুভেচ্ছাবিনিময়ের আগে সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।

এর আগে শনিবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হয়।
নতুন এই কার্যনির্বাহী সংসদে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ অধিকাংশ সদস্যই পুনর্র্নিবাচিত হন।